নামাজে সিজদায় দোয়া করার নিয়ম
সিজদা হলো দুয়া কবুলের সবচেয়ে উত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বান্দা যখন সিজদা করে সে তখন তার রব্বের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশি বেশি দুয়া করো”অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা সিজদারত অবস্থায় দুয়া করতে চেষ্টা করো, আশা করা যায় তোমাদের দুয়া কবুল করা হবে।” মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪।
এ বিষয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে, তবে যেটা বেশি সঠিক বলে ধরা হয় তা হলো (হ্যা), কেউ যদি আরবী না জানে তাহলে সে দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোনো কল্যানের জন্য সিজদাতে নিজের ভাষায় দুয়া করতে পারবে।
১/ যে যিকির ও দুয়াগুলো করা ফরয সেগুলো আরবীতেই করতে হবে যেমন “সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা” এই যিকির আরবীতেই করতে হবে।
২/ যে দুয়া করবেন সেটা আপনি আরবীতে জানেন না। যেমন কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আর তিনি জানেন আস্তাগফিরুল্লাহ (হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো), তাহলে সেই দুয়া তাকে আরবীতেই করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে চান, কিন্তু তিনি জানেন না আরবীতে এই কথা কিভাবে বলতে হবে, তাহলে তিনি বাংলায় এইভাবে বলতে পারবেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে ঋণ থেকে মুক্ত করো।
এই ক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে
১/ যে যিকির ও দুয়াগুলো করা ফরয সেগুলো আরবীতেই করতে হবে যেমন “সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা” এই যিকির আরবীতেই করতে হবে।
২/ যে দুয়া করবেন সেটা আপনি আরবীতে জানেন না। যেমন কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আর তিনি জানেন আস্তাগফিরুল্লাহ (হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো), তাহলে সেই দুয়া তাকে আরবীতেই করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে চান, কিন্তু তিনি জানেন না আরবীতে এই কথা কিভাবে বলতে হবে, তাহলে তিনি বাংলায় এইভাবে বলতে পারবেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে ঋণ থেকে মুক্ত করো।
সিজদায় দোয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ আমি কোন সিজাদাতে দুয়া করবো, নামাযের মধ্যে সিজদাতে নাকি আলাদা সিজদা করতে হবে দুয়া করার জন্য?
উত্তরঃ যে কোনো নামাযের মধ্যে সিজদাতে দুয়া করা যাবে। দুয়া করার জন্য নামায ব্যতীত শুধু সিজদা করা জায়েজ নয়। শুধুমাত্র তেলাওয়াতের সিজদাহ ও শুকরিয়ার সিজদাহ ছাড়া, নামায ব্যতীত অন্য কোন সিজদাহ করা বৈধ নয়।
প্রশ্নঃ ফরয নামাযে দুয়া করতে পারবো নাকি সুন্নত/নফল নামাযের সিজদাতে দুয়া করতে হবে?
উত্তরঃ যে কোনো নামাযের সিজদাতে দুয়া করা যাবে, চাই সেটা ফরয হোক আর নফল সুন্নত হোক, কারণ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমভাবে সিজদাতে দুয়া করতে বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র নফল সুন্নতে করার জন্য আর ফরয নামাযে না করার জন্য – এইরকম ভাগ করে দিয়ে যান নি। তাই, এই কথা বলার কারো অধিকার নাই, ফরয নামাযে করা যাবেনা। যে এইরকম করবে সে কোনো দলীল ছাড়াই শরীয়ত বানানোর দায়ে অভিযুক্ত হবে।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ এই ফতোয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন)
প্রশ্ন: সালাতে সেজদা অবস্থায় অধিক পরিমানে দুআ করার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দুআ করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: নামাযে অনারব ভাষায় দুআ করা যাবে কি না এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, জায়েয নাই। কেউ বলেছেন, জায়েয আছে। কেউ আবার যারা আরবী পারে না কেবল তাদের জন্য জায়েয বলেছেন। তবে সার্বিক বিচারে সর্বাধিক সঠিক মত হল, আরবি না জানলে নিজ ভাষাতেই দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোন কল্যাণের জন্য দুয়া করা জায়েয রয়েছে। সর্ব শেষ মতটিকেই সউদী বড় আলেমগণ সমর্থন করেছেন।
নামাজে সিজদায় দোয়ার হাদিস
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন।সিজদাহ অবস্থায় বান্দা আপন প্রভুর সবচেয়ে অধিক নিকটতম হয়ে থাকে। সুতরাং (ঐ অবস্থায়) তোমরা বেশী-বেশী করে দুআ কর।” (মুসলিম, সহীহ ১/৩৫৮, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৫৬নং)
▪ ইবনে মাসউদের হাদীসে যখন তিনি তাশাহহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন বলেছিলেন :
( ثُمَّ لِيَتَخَيَّرْ مِنَ الدُّعاَءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَيَدْعُوْا )
"অত:পর তার কাছে যে দু'আ পছন্দনীয়, তা নির্বাচন করে দু'আ করবে।"
অন্য এক বর্ণনায় আছে
( ثُمَّ يَتَخَيَّرْ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ )" অতঃপর যা ইচ্ছা চেয়ে দু'আ করতে পারে।" (বুখারী হা/৮৩৫ ও মুসলিম হা/৪০২)
নামাজে সিজদায় দোয়া সমূহ
সুতরাং সেজদাহ অবস্থায় অথবা সালাম ফিরানোর পূর্বে দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল কামনা করে নিজের পছন্দমত যে কোন দু'আ করবে। পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুসলমানের জন্য দু'আ করবে, নিজের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দুআ করবে, স্ত্রী-পরিবারের জন্য দুআ করবে।
মোটকথা, উপরোক্ত ক্ষেত্রে নিজেরমত করে যত খুশি দুআ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ফরজ অথবা নফল নামযে কোনই পার্থক্য নেই।
আরবীতে দুআ করার শর্ত করা হলে, হাদীসের উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে। কারণ পৃথিবীতে সব মানুষের ভাষা আরবী নয়। সুতরাং তাদের দ্বারা আরবীতে দুআ করা আদৌ সম্ভবপর নয়।
নামাজে সিজদায় দোয়া করার নিয়ম
স্বাভাবিকভাবে নামায পড়বেন, সিজদাতে যাবেন, সিজদার তাসবীহগুলো যেমন “সুবহা’না রাব্বিইয়াল আ’লা” ৩/৫/৭ বার বা যতখুশি ততবার অবশ্যই আরবীতে পড়বেন। সিজদার তাসবীহ পড়া হলে আপনি দুয়া করবেন। আরবী জানলে আরবীতে, না জানলে নিজের ভাষাতে।
নামাজে দুনিয়াবী কোনো কল্যান প্রার্থনা করা যাবে কিনা
হ্যা, যাবে যদি না সেটা হারাম কোনো কিছু হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেক হুজুর বলে নামাযে দুনিয়ার কোনো কিছু চাইলে নামায ভেঙ্গে যাবে, এই কথার কোনো দলীল নেই, কোনো দলীল নেই। এটা একটা মনগড়া ফতোয়া। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাযের মধ্যে দুনিয়ার কল্যান চেয়েছেন, যেমন ২ সিজদার মাঝখানে তিনি বলতেন “হে আল্লাহ তুমি আমাকে রিযক দান করো” – রিযক দুনিয়া না আখেরাতের বিষয় আশা করি সকলেই জানেন।আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দুয়া করতে তিনি দুনিয়ার কোনো কিছু চাইতে না করেন নি। সুতরাং এর পরে কারো ক্ষমতা নেই, না করার।
ফরয নামাযের জামাতে দুয়া করা যাবে কি
হ্যা যাবে, যদি সিজদার তাসবীহ পড়ার পরে ইমাম সাহবে যথেষ্ঠ সময় দেন তাহলে করা যাবে। আর যদি সময় কম থাকে তাহলে আগে সিজদার তাসবীহ পড়তে হবে ।নামাজে সিজদায় কি কুরআনের আয়াত দিয়ে দু’আ করা যায়
সিজদায় কুরআনের আয়াত পড়া নিষেধ। কিন্তু মুনাজাতের দু’আ হিসেবে পড়লে তাতে দোষ নেই। (২১৭) ‘আমাকে সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে’ যেমনি আম, তেমনি ‘তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দু’আ কর’ নির্দেশও আম। তাতে কুরআনী ও হাদিসী সব রকম দু’আই করা যাবে। যারকাশী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “সিজদায় কুরআন পড়া মাকরূহ তখন, যখন কিরাআতের উদ্দেশ্যে তা পড়া হবে। পক্ষান্তরে তা যদি দু’আ অথবা (আল্লাহ্র) প্রশংসা হিসেবে পড়া হয়, তাহলে তা কুরআনী আয়াত দিয়ে কুনূত পড়ার মত হওয়া উচিৎ।
শেষ কথা
উল্লেখ্য যে, সেজাদায় গিয়ে সেজদার তাসবীহগুলো আরবীতে পাঠ করার পর সর্ব প্রথম চেষ্টা করবে, হাদীস বা কুরআনে বর্ণিত আরবী ভাষায় দুআগুলো যথাসম্ভব পাঠ করার। তারপর নিজের সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া মহান রবের দরবারে নিজের ভাষায় কাকুতি-মিনতি সহ কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তুলে ধরে দুআ করবে।আল্লাহু আলাম। আল্লাহ উত্তম জানলেওয়ালা, কবুল করার মালিকও তিনিই।
√ উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ,
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
তথ্যসূত্রঃ (২১৮) ২১৭: (ইবনে ঊষাইমীন), ২১৮: (হাশিয়াতু ইবনিল আবেদীন ১/৪৪০, হাশিয়াতুদ দুসূক্বী আলাশ শারহিল কাবীর ১/২৫৩, মাজমূ ৩/৪১৪)
তথ্যসূত্রঃ (২১৮) ২১৭: (ইবনে ঊষাইমীন), ২১৮: (হাশিয়াতু ইবনিল আবেদীন ১/৪৪০, হাশিয়াতুদ দুসূক্বী আলাশ শারহিল কাবীর ১/২৫৩, মাজমূ ৩/৪১৪)